উৎসবের আবহে পালিত হলো বাঁশরী’র ১০ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

04 November 2024

উৎসবের আবহে পালিত হলো বাঁশরী’র ১০ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

গত ৪ নভেম্বর, ২০২৪ ছিল বাঁশরী – একটি নজরুল চর্চা কেন্দ্র’র জন্য বিশেষ একটি দিন। ২০০৪ সালের ৪ নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত এ সংগঠনটি এই দিনে সাফল্যের দশম বর্ষে পদার্পণ করে। বাঁশরীর ১০ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এ তাৎপর্যপূর্ণ দিনটি ব্যাপক আনন্দ-উদ্দীপনা ও প্রাণবন্ত আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্যকর্ম প্রচারে নিবেদিত বাঁশরী তার প্রায় এক দশকের কার্যক্রম ও অর্জনকে এর সদস্য, শিল্পী ও অতিথি শুভাকাঙ্ক্ষীদের সাথে উদযাপন করতে বর্ণাঢ্য নানা আয়োজন করে।


সকাল ১১টায় কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে বাঁশরী তার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কার্যক্রম শুরু করে। বাঁশরী’র প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি ড. ইঞ্জিনিয়ার খালেকুজ্জামান, বাঁশরীর সদস্য ও শিল্পীদের নিয়ে কবির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। কবি নজরুল রচিত “জয় হোক, জয় হোক” গানটি গেয়ে বাঁশরীর সদস্য ও শিল্পীরা একটি শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন।


প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রথম পর্বটি শেষ হয় কবির সমাধিপ্রাঙ্গণে আনন্দ-উল্লাসের মাধ্যমে রং-বেরঙের দৃষ্টিনন্দন বেলুন ওড়ানোর মাধ্যমে।


বাঁশরী তার ১০ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান উদযাপনের স্থান হিসেবে প্রতিবারের ন্যায় এবারও বাংলাদেশ বন্ধু ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়কে বেছে নেয়। এ উপলক্ষে অনুষ্ঠানস্থল রঙিন বেলুন, ফুল ও নানা উপকরণ দিয়ে সজ্জিত করা হয়। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনে ২য় পর্বের মূল অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শিল্পী, নজরুল অনুরাগী, বিশিষ্ট নজরুল গবেষক, নজরুলবোদ্ধা, বন্ধু’র কর্মী ও বাঁশরী’র শুভাকাঙ্ক্ষীগণ একে একে জড়ো হতে থাকেন। দেখতে দেখতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে অনুষ্ঠানের ভেন্যুটি।


অনুষ্ঠানে অভ্যাগত অতিথি ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের ড. ইঞ্জিনিয়ার খালেকুজ্জামান স্বাগত জানান ও অতিথিদের ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নেন। অন্যদিকে অতিথি ও শিল্পীবৃন্দও ড. ইঞ্জিনিয়ার খালেকুজ্জামানকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।


অতিথি ও শিল্পীদের উপস্থিতিতে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটার মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। এরপর ড. ইঞ্জিনিয়ার খালেকুজ্জামান স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন। পল্লীগীতি ও লালন সংগীতের প্রখ্যাত শিল্পী ফরিদা পারভীন, প্রসিদ্ধ নজরুল সংগীতশিল্পী সালাহ উদ্দিন আহমেদ, এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’র শিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা ড. মনোরঞ্জন ঘোষাল, কবি নজরুল ইন্সটিটিউটের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ, বাংলাদেশ বেতার, রংপুরের সাবেক আঞ্চলিক পরিচালক ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন এর পরিচালক (কারিগরি ও প্রকৌশল) ড. মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ, “বনের মেয়ে পাখী” নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র ও ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী স্বাগতার উপস্থিতি অনুষ্ঠানে যোগ করে বাড়তি মাত্রা।


নজরুলের সাহিত্যকর্ম প্রচার, প্রসার ও সংরক্ষণে অগ্রণী ভূমিকা রাখার জন্য বাঁশরীর প্রতি মুগ্ধতা প্রকাশ করে সংগঠন ও এর প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি ড. ইঞ্জিনিয়ার খালেকুজ্জামানের ভূয়সী প্রশংসা করেন শিল্পী ফরিদা পারভীনসহ অন্যান্যরা। “বনের মেয়ে পাখি,” “আলেয়া” এবং “সেতু-বন্ধ” প্রভৃতি নাটকের কুশীলবদের উপস্থিতি আয়োজনটিকে আরও বিশেষ করে তোলে।

 

খ্যাতনামা আবৃত্তিশিল্পী টিটো মুন্সি এবং সংগীতশিল্পী ও বাঁশরীর সংগীত প্রশিক্ষক সুদাম কুমার বিশ্বাসকে বাঁশরীর কার্যক্রমে তাৎপর্যপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ক্রেস্ট ও মেডেল দিয়ে সম্মাননা প্রদান করে বাঁশরী। অনুষ্ঠানে নজরুলসংগীত পরিবেশন, কবিতা আবৃত্তি ও গল্প-আড্ডায় মুখরিত করে রাখেন অনুষ্ঠানে আগত শিল্পী, বাঁশরীর কর্মী ও অংশগ্রহণকারীগণ। এ আয়োজনে শিল্পীদের মধ্যে যারা সংগীত পরিবেশন ও কবিতা আবৃত্তি করেন তাদের সবাইকে মেডেল প্রদান করা হয়।


বাঁশরীর নানা আয়োজনের পাশাপাশি অভ্যাগত অতিথি ও শিল্পীদের জন্য ছিল আপ্যায়নের ব্যবস্থাও। অতিথিদের খাবার পরিবেশনের পাশাপাশি চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রাত ১১টার দিকে সাংস্কৃতিক আবহে পরিপূর্ণ দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।