29 May 2023
সাম্যবাদী কবিতাগুচ্ছের ৯০ বছর
কাজী
নজরুল ইসলামের “সাম্যবাদী” কবিতায় মানবজাতির প্রতি কবির সাম্যতা ও অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির
বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। বাংলা তথা বিশ্ব সাহিত্যে নজরুলের “সাম্যবাদী” কবিতা এক অনবদ্য সংযোজন।
এই কবিতায় তিনি হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সকল ধর্মের মানুষের সম অধিকার লাভের
কথা দৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন। এই কবিতা মানবসমাজকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ
করে ও সবার প্রতি সমান এবং ন্যায্য আচরণ করতে উৎসাহিত করে। স্বয়ং মানুষের হৃদয়েই বিধাতা
বিরাজ করেন এবং মানুষের অন্তরের চেয়ে বড় কোন উপাসনালয় নেই সেটাই তাঁর কবিতার মর্মবাণী।
তিনি সর্বান্তকরণে একজন সাম্যবাদী কবি ছিলেন তার কবিতা ও গানে এর প্রকৃষ্ট নিদর্শন মেলে।
কৈশোর
থেকেই নানা ধরনের ঘটনা ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের সান্নিধ্য নজরুলের মধ্যে অসাম্প্রদায়িক
মানসিকতার বিকাশ ঘটাতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে যা পরবর্তী সময়ে তার সাম্যবাদী মনোভাবকে
পূর্ণতা দিতে সম্যক ভূমিকা পালন করে। কাজী নজরুল ইসলামের এক বন্ধু শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়
ছিলেন হিন্দু, আরেক বন্ধু শৈলেন্দ্রকুমার ঘোষ ছিলেন খ্রিস্টান। তিন সম্প্রদায়ের এই
তিনবন্ধু একসঙ্গে খেলাধুলা করতেন, একসঙ্গে বেড়াতেন। এই বন্ধুত্রয়ের একসাথে খেলাধুলা,
পারস্পারিক সাহচর্য নজরুলের জীবনদর্শনে অসাম্প্রদায়িক
দৃষ্টিভঙ্গি সৃজনে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে, নিঃসন্দেহে। আর তাঁর এই জীবনের বাস্তবতা থেকে
উৎসারিত উপলব্ধি থেকেই পরবর্তীতে তিনি রচনা করেন কালজয়ী “সাম্যবাদী” কবিতা। সাম্প্রদায়িক
দাঙ্গা, বর্ণবাদ, জাতিবিদ্বেষ, উঁচু-নিচু বিভেদ বারবার বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত ও ভারতীয়
উপমহাদেশকে বিপর্যস্ত করেছে, রক্তাক্ত করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে কাজী নজরুলের সাম্যবাদী
কবিতা প্রতিভাত হয়েছে এক আলোকবর্তিকারূপে। নানা জাতি-ধর্মের এই ভারতীয় উপমহাদেশে সম্প্রীতি
ও সাম্যের বার্তা পৌঁছে দিতে এই কবিতা কালোত্তীর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ১৯২৬ সালে রচিত
সাম্যবাদী কবিতাগুচ্ছের ২০১৬ সালে ৯০ বছর পূর্তি হয়। এই যুগান্তকারী “সাম্যবাদী” কবিতাগুচ্ছের
তাৎপর্য ও গুরুত্ব বিবেচনায় রেখে বাঁশরী ২০১৬ সালের ৩০শে জুলাই ঢাকা প্রেস ক্লাবে
“সাম্যবাদী কবিতাগুচ্ছের ৯০ বছর” পূর্তি উপলক্ষ্যে এক আলোচনা ও আবৃত্তি অনুষ্ঠানের
আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের শুরুতে সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর প্রয়াণে ১ মিনিট নীরবতা পালন
করে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নজরুল ইনস্টিটিউটের
সাবেক নির্বাহী পরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। বিশেষ অতিথি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা
মনোরঞ্জন ঘোষাল, অধ্যাপক জুবাইদা গুলশান আরা হেনা, এবং চলচ্চিত্র পরিচালক নারগিস আক্তার।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টসের অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ
খান।
স্বাগত
বক্তব্যে ‘বাঁশরী’র সভাপতি ড. খালেকুজ্জামান বিশ্বব্যাপী ধর্মান্ধতার উত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে নজরুল চর্”ার ওপর
গুরুত্ব আরোপ করেন। কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা প্রধান অতিথির বক্তব্যে আন্তর্জাতিক মানব
সাম্য দিবস হিসেবে নজরুলের জন্মদিবসটি পালন করার প্রস্তাব করেন। কেননা কবি বারবার মানব
সাম্যের কথা বলেছেন। মূল প্রবন্ধে ড. খান নজরুলের একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনীর অভাবের কথা
উল্লেখ করেন। এছাড়া তিনি আলোচনা করেন কবির রাজনৈতিক ও সাংবাদিকতা জীবন নিয়ে। বিশিষ্ট
চলচ্চিত্র পরিচালক নারগিস আক্তার তাঁর বক্তব্যে নজরুলের সাহিত্যে লিঙ্গ সাম্য এবং প্রেম
নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়া তিনি নজরুলকে নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের ঘোষণাও দেন। বীর
মুক্তিযোদ্ধা মনোরঞ্জন ঘোষাল তাঁর বক্তব্যে নজরুলের জন্মদিবসকে আন্তঃ ধর্মীয় সম্প্রীতি
দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবী জানান। তিনি আশা প্রকাশ করেন এতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বৃদ্ধি
পাবে। ‘বাঁশরী’র সদস্য অর্থনীতিবিদ জনাব সুজিত
চৌধুরী নিজ বক্তব্যে জার্মান ভাষায় নজরুল র্চচার ওপরে আলোকপাত করেন এবং নজরুল মননে
বিশ্ব মানবতার ওপর আলোচনা করেন। অনুষ্ঠানে আরও আলোচনা করেন কার্পাসডাঙা নজরুল স্মৃতি
সংসদের সাধারণ সম্পাদক জনাব মোঃ সাইফুল ইসলাম ও বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমীর সাবেক
পরিচালক জনাব নূরুন নাহার। আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে নজরুল সঙ্গীত এবং নজরুলের কবিতা আবৃত্তি
করা হয়। নজরুলরে কবতিা আবৃত্তি করেন ড. শাহাদাৎ হোসেন নিপু এবং শামীমা তন্দ্রা। অনুষ্ঠানটি
উপস্থাপনা করেন কবি এম. এম. রেজাউল হোসাইন টিটো।